Sunday, August 5, 2018

এর শেষ কোথায়

১) বাংলাদেশ জাতিসংঘ শিশু সনদ ও আন্তর্জাতিক শিশু অধিকারের সকল ধারায় সাক্ষরকারী দেশ। দেশে শিশু অধিকার আইন, নির্যাতনবিরোধী আইন, কর্পোরাল পানিশমেন্ট বিরোধী (যেমন স্কুলে শারিরীক পীড়ন)  আইন রয়েছে। পৃথিবী দেখছে সবই চুড়ান্ত ভাবে ভংগ করেছে আইনগুলো প্রতিষ্ঠার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার নিজেই।

--পাঁচ দিন, দশ দিন, কুড়ি দিন, কতো দিন শিশুরা রাস্তায় থাকত? ফিরে তারা যেতই, ফিরতে হতই। কিন্তু শিশু-কিশোরদের উপর হামলা? যুদ্ধাবস্থামুক্ত শিশুনিবর্তক প্রথম এবং একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি শুন্য (জিরো) হয়ে গেল।  

====
২) “আমাদের মুক্তির সংগ্রাম” ভাষ্যটি বুকে ধরে যিনি দেশকে পাকিস্তান-রাহুমুক্ত  করেছিলেন, তাঁরই কন্যা কীভাবে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” ভাষ্যটি বুকে ধরে সামান্য  একজন মন্ত্রীর রাহুমুক্ত হতে অ্যাতটা অক্ষম হলেন; দানব-রাহুর পক্ষ নিয়ে জনগণের প্রতিপক্ষও হলেন নির্দ্বিধায়? এই একজন মন্ত্রীকে কি সরকার কোটি কোটি দেশবাসীর চাইতেও বেশি ভয় পায়? পেলে কেন?

-- বঙ্গবন্ধুর “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম” এবং “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” এর চেতনা, উদ্দেশ্য, বক্তব্য, এবং মর্যাদা একই! সমান সমান। এমনই ন্যায্য যেন ৪৭ বছর পর বঙ্গবন্ধুই শ্লোগানটি দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর দলটিই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধুলিস্যাৎ করল! জাতির জনক কি শুধুই দলটির রাজনীতি ব্যবসার পুঁজি? আজ হতে দলটির নৈতিক ভিত্তিও শুন্য (জিরো) হয়ে গেল।
       
-- ছাত্ররা ‘মন্ত্রীর পদত্যাগ চায়নি’ কথাটিকে যদি সত্যও ধরি; ন্যুনতম রাজনৈতিক নীতিবোধ, নৈতিকতা, বিবেচনাবোধ বা জনগণের প্রতি এক কণা সম্মানবোধ থাকলেও স্বপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রী শুরুতেই পদত্যাগ করতেন। অথবা প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সরে যেতে অনুরোধ করতেন। তাঁর পদত্যাগে সিস্টেমের আহামরি কোনো পরিবর্তন হয়ত হত না—কিন্তু দেশবাসীর প্রতি, শিশুদের প্রতি অশেষ সম্মান দেখানো হত। তারাও ঘরে ফিরত। দূর্‍্যোগও নামত না। গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই এ’রকম—বেশিরভাগই সিম্বলিক ও নর্ম্যাটিভ। দেশে গণতন্ত্র নাই বলেই এই সৌন্দর্যটি সরকারের মোটেও নাই; দেখানোর আগ্রহ বা গরজ কোনোটা তো নাই-ই!

===
৩) ধরি গুজব, বিএনপি-জামাতশিবির,  ষড়যন্ত্র, রাজনীতি সবই সত্য, তা’হলে কথা হচ্ছেঃ

--আক্রমন করে সরকারপক্ষ কেন গুজবের সব রাস্তাগুলো খুলে দিল?

-- প্রশ্নবোধক জাল ছবি ভিডিওগুলো বাদ দিলেও  হাজারে হাজারে রক্ত হিম করা অথেন্টিক ছবি-ভিডিও  কি বিশ্ববাসী দেখছে না, দেখবে না?

--কোনো আন্দোলনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটলে প্রতিবিধান কি শিশুপীড়ণ?

--রাজনৈতিক দলগুলোকে উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে না দিলে তারা যে অবশ্যই চোরাগোপ্তা পথে, গেরিলা পদ্ধতিতে উদ্দেশ্য হাসিলে নামবে—কে না জানে? যদি বর্তমান সরকারি দল বিরোধী দলে থাকত, ক্ষমতাসীনরা যদি একই আচরণ করত তারাও একইভাবে সুযোগ খুঁজত। প্রতিপক্ষকে মাঠের রাজনীতি করতে না দিয়ে, উলটো ঠেকাতে গিয়ে অহিংস আন্দোলনে রত শিশুদের উপর আক্রমন কতটা বীভৎস নৃশংসতা—ধারণা করা যায়?

-- অন্যের আন্দোলনে যোগ দেয়া বা সরকার পতনের আন্দোলন, ফোনালাপ সবই তো নাগরিকের ন্যয্য অধিকার—বৈধ,সিদ্ধ, সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক অধিকার! তা’হলে তারা যদি ছাত্রদের সঙ্গে যোগও দেয় অহিংস আন্দোলনে রত শিশুদের আক্রমন করা কোন ধরণের প্রতিরোধ? এ'টি সহিংসতা। সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ।

==
৪ আগস্ট ২০১৮’র মত বীভৎস কালো দিন পৃথিবীর কোথাও কোনো প্রত্যন্তে কোনো মানুষের আবাসেই কখনোই কোনোভাবেই না নামুক।

No comments:

Post a Comment

প্রকৃতির শেষ ঠিকানা

"আকাশ নদীর মোহনায় প্রকৃতির শেষ ঠিকানা, লালচে আভায় মুঠো ভরে খুঁজেফিরি জীবনের মানে "